হাওজা নিউজ এজেন্সি: ব্রিটিশ সার্জন ভিক্টোরিয়া রোজ, যিনি একাধিকবার গাজায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে চিকিৎসা দিয়েছেন, বলেন, জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী গাজায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার শিশু আহত হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনে এই সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪০০। এটি ইসরাইলি হামলার ভয়াবহতা স্পষ্ট করে।
রোজ জানান, মে মাসে নাসের হাসপাতালে অবস্থানকালে তিনি প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জনের অস্ত্রোপচার করেছেন, যাদের মধ্যে প্রথম কয়েকজন সাধারণত ১৫ বছরের নিচে। তিনি বলেন, তিনি ১৮ মাস বয়সী এক শিশুর ৫০ শতাংশ দগ্ধের ক্ষত সারিয়েছেন, তিন বছর বয়সী এক শিশুর ৩৫ শতাংশ দগ্ধ ক্ষতের চিকিৎসা করেছেন—যেসব ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পাঁচ বছরের এক মেয়ের হাত আংশিক পুনর্গঠন করতে হয়েছে, যখন তার মায়ের অস্ত্রোপচার পাশের কক্ষে চলছিল। অন্য রোগীদের মধ্যে ছিলেন সাত বছরের এক মেয়ে যার হাঁটু হারিয়েছে এবং এক ছেলে যার বাম গোড়ালি নেই।
ব্রিটিশ চিকিৎসক নিক মেনার্ড, যিনি সম্প্রতি তৃতীয়বারের মতো গাজা সফর শেষে ফিরেছেন, বলেন, তিনি প্রতিদিন এমন অপরাধ প্রত্যক্ষ করেছেন যা তিনি “গণহত্যা ও জাতিগত নিধন” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি জানান, একবার তিনি আল-আকসা হাসপাতালের আইসিইউতে হামলার সময় কাছাকাছি অপারেশন করছিলেন।
তিনি সাত মাস বয়সী জয়নাব নামের এক শিশুর করুণ মৃত্যুর ঘটনাও উল্লেখ করেন। শিশুটি অপুষ্টিতে মারা যায় কারণ ইসরাইলি বাহিনী মার্কিন চিকিৎসকদের আনা জীবনরক্ষাকারী দুধের ফর্মুলা বাজেয়াপ্ত করেছিল। বাধ্য হয়ে পরিবার তাকে শুধু চিনি মিশ্রিত পানি খাওয়াচ্ছিল।
মেনার্ড বলেন, “গাজা আমাদের গণমাধ্যমের কাছে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের সরকারও তাদের ব্যর্থ করেছে।”
দেইর আল-বালাহ এবং গাজা শহরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সংকট চরমে। পর্যাপ্ত স্ট্রেচার না থাকায় স্বেচ্ছাসেবকরা আহতদের হাতে বহন করছেন। আল-আহলি আরব ও আল-শিফা হাসপাতালগুলো প্রতিনিয়ত বিমান হামলায় আহতদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ইসরাইলি সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৭০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং গাজা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (ICJ) ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।
আপনার কমেন্ট